ঢাকারবিবার , ৯ মে ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কাহারোল
  5. কুড়িগ্রাম
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খানসামা
  9. খেলা
  10. গাইবান্ধা
  11. ঘোড়াঘাট
  12. চাকরী বার্তা
  13. চিরিরবন্দর
  14. জাতীয়
  15. ঠাকুরগাঁও
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঈদ-উল-ফিতরের শিক্ষা

দিনাজপুর বার্তা
মে ৯, ২০২১ ৪:০২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

শাওয়ালের এক কপি বাঁকা সমগ্র পৃথিবীতে এক নতুন প্রাণ চাঞ্চল্য ও আনন্দের বন্য প্রভাহিত করে। রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগত নিয়ে বিশ্ব মানবতার শান্তি, কল্যান, মুক্তি, ও চিরন্তন নির্ভূল আদর্শের পয়গামবাহী আল-কুরআন অবর্তীনের মহান মাস রমজানুল মোবারকের সমাপ্তির পরক্ষনেই আসে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ সারা বিশ্বের মুসলমানদের ঘরে ঘরে বয়ে আনে আনন্দের সওগাত। ধনী, নির্ধন, সাদা, কালো, ভাল, মন্দ, ছোট, বড় সকলেই ঈদের আনন্দের শরীক হয়। শাওয়াল মাসের ১লা তারিখ ঈদুল ফিতর উৎসব উদযাপিত হয়। গরীবদের প্রতি ধনীদের সহানুভুতির হাত প্রমস্ত করে ফিতরা দানের মাধ্যমে এ ঈদ উদযাপিত হয়। আর এ জন্য এক ঈদ-উল-ফিতর বলা হয়। আমদ প্রমোদহীন সংসার ত্যাগি বৈরাগ্যের নীতিকে ইসলাম কোন দিনই সমর্থন দেয়নি তাই নিদের্শ আমোদ প্রমোদ ও উৎসব অনুষ্ঠানের বব্যস্থা করেছে ইসলাম। কিন্তু একটা লক্ষনীয় যে, এসকল আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠান যেন নিছক বিলাশ, উচ্ছলতা ও নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টিকারী অনুষ্ঠানে রুপান্তরীত না হয়। এ বিষয়ে ইসলাম সুষ্ঠ নিয়ন্ত্রন বব্যস্থা আরোপ করেছে। মানবীয় কৃপ্রকৃত্তির বিনাশ সাধন সংযম ও নিয়ন্ত্রন ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নফছে আম্মারার ধংষ সাধন ও নফছে মুতমায়িন্নার উৎকর্ষতা ইসলামী “তাখফিয়ার” প্রধান লক্ষ। তাই তো নিদোর্শ আমোদ প্রমোদ ও উৎসব পালনের জন্য বৎসরে দুইটি ঈদের দিবস উদযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি হচ্ছে ঈদ-উল ফিতর। অন্যটি হচ্ছে ঈদ-উল-আজহা। ফিতর শব্দের অর্থ খোলা বা মুক্ত করা দীর্ঘ এক মাস তার দিনের বেলা পানাহার বন্ধ রাখার পর এই দিনেই প্রথম খাওয়ার জন্য মুখ খোলার অনুমতি দেওয়া হয় তাই এর নাম ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ আরবী শব্দ যার অর্থ আনন্দ, উৎসব ও খুশি। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর নিকট এই দিনটি বার বার আনন্দ ও খুশির বন্যা নিয়ে প্রতি বছর নিদির্ষ্ট সময়ে হাজির হয় তাই এর নাম ঈদ-উল-ফিতর।
হাদীসে বর্ণিত আছে হযরত আনাস রাঃ বনর্না করেছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মদিনায় গিয়ে দেখতে পেলেন যে, মদীনাবাসীদের দুটো দিবস খেলাধুলা ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন এদিন দুটোর তাৎপর্য কি? উত্তরে তারা বললেন আমরা জাহিলিয়াতের যুগে ও দিন দুটো আনন্দ উৎসব ও খেলাধুলা তামাশার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিতাম। হুযুর সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বললেন এর পরিবর্তে আল্লাহতালা এরচেয়ে দুটো উত্তম দিবস নির্ধারিত করে দিয়েছেন। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার (আবু দাউদ শরীফ) হযরত আবু সাঈদ খুদরী বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিবসে ঘর থেকে বেরোবার পর ঈদগাহে যেতেন।
এবং সর্বাজ্ঞে দু’রাকাত নামায আদায় করতেন। লোকেরা নিজ নিজ কাতারে বসে থাকতো। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতেন। তাদেরকে উপদেশ ও ওয়াজ করতেন এবং আল্লাহর বিধান যথাযথ পালন করার নির্দেশ দিতেন। পবিত্র কুরআন মজিদে এরশাদ হচ্ছে হে ঈমানদারগণ তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমনি ভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি ফরজ ছিল। যাতে করে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। মুত্তাকী শব্দের ব্যাপক অর্থ হচ্ছে সত্যসন্ধানী সত্য গ্রহণকারী। সত্যের উপর সুধীর অপ্রতিষ্ঠিত থাকা আল্লাহ ভীরু, দায়িত্বশীল ও কর্তব্য সম্পাদনকারী এ কথায় আল্লাহর মর্জি বিপরীত কার্যাবলী থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখে আল্লাহর মর্জি মোতাবেক জীবনযাপনকারীর ব্যক্তিরাই হচ্ছে মুত্তাকি।
আর মুত্তাকীর ঐ সমস্ত বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী নিজ জীবনে গ্রহণ করাই হল ঈদের মহান শিক্ষা। ঈদের দিনে দরিদ্র মিসকিন অভাবগ্রস্থ দুস্ত এতিম মুসাফির ও আল্লাহর পথে মুজাহিদদের মধ্যে খাদ্য বস্ত্র যাকাত সদকা ও ফিতরা ইত্যাদি বিতরন করার তাকিদ ইসলাম দিয়েছে।এ-র তাৎপর্য হচ্ছে সমাজে দুর্বল ও অসহায়দের অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করা। এ-ই বিষয়ে কুরআনে পাকে ইরশাদ হয়েছে- ধনীদের সম্পদে দরিদ্র ও বজ্ঞিতদের অধিকার রয়েছে। বস্তুত ইসলামের এ সকল ব্যবস্থা দরিদ্রদের প্রতি ধনীদের অনুগ্রহ নয়। বরং অপরিহার্য কর্তব্য। এর মাধ্যমে পারস্পরিক স্নেহ, মায়া, মমতা, সমবেদনা, সংবেদনশীলতা ও পারস্পরিক অধিকার বুনিয়াদে এক সুবিচারক মুলুক সুখ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের মহান শিক্ষা ও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে।
হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, যারা রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করতে পারেনি তাদের উপবাসের কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী শরীফ) অন্য হাদীসে রয়েছে – এমন অনেক রোজাদার ও রাত্রি জাগরনকারি তাহাজ্জুদ গুজার রয়েছেন। যাদের ভাগ্যে রাত্রি জাগরন ও উপবাস ছাড়া কিছুই জুটায় না। এজন্যই মহানবী (সা) এর পবিত্র বানী ঘোষিত হয়েছে যে, ঈদের খুশি সত্যি কারের সিয়াম সাধনা কারীর জন্যেই। তিনি এরশাদ করেছেন- ঐ ব্যাক্তির জন্য ঈদের খুশি নেই, যে রোজার দিনে উদর পুরিয়েছে। ঐ ব্যাক্তির জন্য ঈদের খুশি নেই যে রমযান মাস পেয়ে নিজের পাপ মার্জনা করতে পারে নি। আর তার জন্যও ঈদের খশি নেই যে গরীবদের পাওনা আদায় করে নাই। অর্থাৎ যাকাত ফেতরা দেয়নি। একথার বড় উদাহারন আমরা পাই আমিরুল মোমেমিন হযরত ওমর (রাঃ) ফারুক এর ঈদের দিনে হাসি খুশি ত্যাগ করে গুমরিয়ে গুমরিয়ে কাদছিলেন। সাথীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আমিরুল মোমেনিন আজ ঈদের দিনে হাসি খুশি ত্যাগ করে আপনি কাদছেন কেন? উত্তরে হযরত ওমর বললেন-আজ আমি জানতে পারছি না যে, মাহে রমযানের মত বড় নেয়ামত পেয়েও আমি কি পাপ মুক্ত হতে পেরেছি? না এখনও আমি গুনাগার হয়ে গেলাম। ঈদ-উল ফিতরের সবচেয়ে বড় আকর্ষন গরীবদের দান করা। এখন এ ফিতরা দান সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা যাক।
মুসলমান হিসাবেআমাদের সমাজে অনেক ধনী ব্যাক্তি যাকাত প্রদান করে থাকেন। আর প্রায় সকলেই ফিতরা দান করে থাকেন। এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু যাকাত ফিতরা দানের ব্যাপারে যে সব ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই ইসলাম সম্মত নয়। যেমন অনেক দনী ব্যাক্তি তার সমুদয় ধনসম্পদের হিসাব না করেই লাম ছাম একটা এমাউন্ট যাকাত দিয়ে থাকেন। এটা শরীয়ত সম্মত নয়। এ দান সদকা হতে পারে যাকাত হতে পারে। কারন যাকাতের নিদিষ্ট বিধি রয়েছে আর এর ব্যয়ের ও সুনিদ্রিষ্ট খাত রয়েছে ঠিক সে কেয়াল খুশিমত করলে তা হবে না। আমরা আজ কাল লক্ষ্য করি যে, যাকাত প্রদানে ঢাক-ঢোল বাজানো হয়।
(উল্লেখ যে গত কয়েক দিনে আগে ময়মনসিংহে নুরানী জর্দা কারখানায় যাকাতের কাপড় নিতে এস ২৭ জনের মর্মান্তি মৃত্যু হয়েছে। যাকাতের সু-নিদৃষ্ট শরিয়া ভিত্তিক নিতিমালা থাকলে এমনটি হত না। ) আমাদের বাংলাদেশর কথায় ধরা যাক এখানে সুপরিকল্পিত ভাবে যাকাত ফিতরা আদায় করে উৎপাদন মুলক কাজে গরীবদের জন্য ব্যয় করা হলে কয়েক বছরের মধ্যে ভিক্ষা রোধ করা যায়। এটা সরকারি কিংবা বে-সরকারি উদ্যোগে হতে পারে। আমরা মনে করি বাংলাদেশে মুসলমানদের ২ লক্ষ ২৭ হাজার মসজিদ আছে বা কমিউনিটি সেন্টার আছে। প্রতিটি মসজিদ এলাকার দনী ব্যাক্তিগণ নিজ নিজ এলাকার গরীব লোকদের তালিকা করে তাদের এক বছরের যাকাত ফিতরা একত্রিত করে একটি উৎপাদন মূলক কাজে ব্যায় করতে পারেন আর সে গরীব পরিবারের এক বা একাধিক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে সেখানে তারা শ্রমের মাধ্যমে গরীব পরিবার আছে যারা সামান্য উপকরনের অভাবেই একটা কিছু করতে পারছেনা।
তাদেরকে যাকাত ফিতরা ভিক্ষার মত না দিয়ে উপকরন ক্রয় করে দেওয়া যায়। কিন্তু তা হচ্ছে না কেন? আমার লেখাটিতে এর প্রধান কারন হচ্ছে দুটি। প্রথম হলো-আমাদের দেশে যে যাকাত ফিতরা দেওয়া হয় তা দায়সারা গোছের অর্থাৎ এটাকে ধনীরা গরীবদের প্রতি করুনা মনে করে। গরীবদেরকে মনে করা হয় করুনার পাত্র। আসলে তারা তো কোন ক্রোমেই করুনার পাত্র নয়। কেকনা ধনীর ধনে গরীবের হক নির্ধারন রয়েছে। তাই ধনী ব্যাক্তি যাকাত ফিতরা দিয়ে দায়িত্ব মুক্ত হচ্ছে মাত্র। আর যাকাত ফিতরা না আদায় করলে সে নিজেকে দায়িত্ব মুক্ত করতে পারেনি বলে দোষী সাবস্ত্য হবে। সুতরাং যাকাত ফিতরা কিংবা দান, সাদকা এগুলো করুনার বিষয় নয় বরং এগুলো হককুল এবাদ। স্বেচ্ছায় আদায় না করলে ইসলামী রাষ্ট্রে এগুলো আইনের মাধ্যমে আদায় করার কথা। হযরত আবু বক্কর (রা) যাকাত প্রদানে অস্বীকার কারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করেছিলেন।
দ্বিতীয় কারন শুধু গতানুগতিক ভাবে দান খয়রাত নয় পরিকল্পিত ভাবে দান খয়রাত করলেই গরীব আর গরীব থাকে না। ভিক্ষা বৃত্তিও বন্ধ হয়ে যাবে। সমাজে এ প্রথা চালু হতে পারে কেবল মাত্র উদ্দ্যেগ গ্রহন করলে। আসুন পারস্পারিক সহযোগিতা ও সহ মর্মতার আদর্শে উদ্বত্ত হয়ে আমরা ধনী-গরীবের ব্যবধান দুর করতে পারি। ঈদ-উল ফিতরের সে শিক্ষাই আজ আমাদের কামনা হওয়া উচিত। আমাদের ম্লোগান হবে-“সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”। সাম্য-মৈত্রী ও ভ্রাতেৃ¦র বন্ধনের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে সারা যাহানই ঈদগাহে পরিনত হউক মহান আল্লাহর নিকট এ প্রার্থনাই করি। আল্লাহ হাফিজ- (আমিন)।
লেখক ঃ- প্রভাষক ও সাংবাদিক।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।