ঢাকাবুধবার , ৬ জুন ২০১৮
  1. অন্যান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কাহারোল
  5. কুড়িগ্রাম
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খানসামা
  9. খেলা
  10. গাইবান্ধা
  11. ঘোড়াঘাট
  12. চাকরী বার্তা
  13. চিরিরবন্দর
  14. জাতীয়
  15. ঠাকুরগাঁও
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দিনাজপুরে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন -২০০১ ও মহামান্য হাইকোর্ট এর পূর্ণাঙ্গ রায়’ শীর্ষক একটি জাতীয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
জুন ৬, ২০১৮ ৬:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন -২০০১ ও মহামান্য হাইকোর্ট এর পূর্নাঙ্গ রায়’ শীর্ষক একটি জাতীয় আলোচনা সভা আজ ০৬ জুন ২০১৮, বুধবার, সকাল ১০.৩০টায় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষ-১ (কাঞ্চন), দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (সিডিএ) ও জেলা প্রশাসন, দিনাজপুরের যৌথ উদ্যোগে এবং ভূমি অধিকারে দেশব্যাপি কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহ এএলআরডি-ঢাকা; আরবান-ঢাকা; কাপেং ফাউন্ডেশন-ঢাকা; নাগরিক উদ্যোগ-ঢাকা; উত্তরাঞ্চলের পিএলএনেট (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ) এর সহযোগিতায় আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়।

সিডিএ’র নির্বাহী পরিচালক শাহ-ই-মবিন জিননাহ্ এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর, জেলা প্রশাসক, দিনাজপুর। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ-ঢাকা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো: শামসুল আজম, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার, দিনাজপুর; মো: মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), দিনাজপুর; কাজল দেবনাথ, উপদেষ্টা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ-ঢাকা; এস. এম রেজাউল করিম, আইন উপদেষ্টা, ব্লাষ্ট-ঢাকা; শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি-ঢাকা।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর বলেন, দেশের জনগণের একটি অংশকে শত্রু আখ্যায়িত করে যে বৈষম্য সংঘটিত হয়েছে সেটির জন্য আমি ব্যাথিত। আশার কথা হলো বর্তমান সরকার স্বদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের অংশ হিসেবে আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনারা জানেন যে জমি জমার বিষয়গুলোয় অনেক যন্ত্রনা দেয়। তাছাড়া অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের বাস্তবায়নের জন্য যে জনবল আমাদের দরকার সেটিও পর্যাপ্ত নয়। তাই এটি বাস্তবায়নের জন্য কিছু সময় দরকার। আমরা যদি সৎ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে একাত্ব হয়ে কাজ করি তবেই আমরা দ্রুত সফলতা পাবো।
প্রধান বক্তা এ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের গড়িমসি আছে। আছে বিচারের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসন, জেলা জজ আমাদের আশস্ত করেছেন যে আইনের বিধান মতে অতি দ্রুত ট্রাইব্যুনালের আবেদন নিস্পত্তির ক্ষেত্রে তারা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তিনি আরো বলেন, দিনাজপুরে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৪৭১ টি আবেদন করা হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৫৯টি অর্থাৎ চার শতাংশ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি দ্রুত বাদবাকি আবেদনের নিষ্পত্তির জন্য দাবী জানান।
তিনি আরো বলেন, সংখ্যালঘু নির্মুল করণের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনকে অনেকে ব্যবহার করেছে। একসময় পাকিস্তানের সামরিক আইনের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি, এই আইনের বলেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে জনগণ এই আইন প্রত্যাহারের দাবী জানালেও নানা স্বার্থানেষী মহলের কারণে শত্রু সম্পত্তির পরিবর্তে অর্পিত সম্পত্তি নামে এই কালো আইনটি আজো বলবৎ রয়ে গেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নে স্বদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন তাই আমি দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও তার প্রশাসন, বিচারকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সহযোগিতা আশা করছি। এই ইতিবাচক আইনটি যেন গতি পায় সেজন্য আবেদন জানাচ্ছি। আমাদের মাঝে এখনো পাকিস্তানি চিন্তা ভাবনার কিছু মানুষজন আছেন যাদের মধ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রেত্মাতারা বসবাস করছেন। এসব প্রেত্মাতাদের দ্রুত তাড়িয়ে দিতে হবে এবং এই আইন বাস্তবায়নে আর কোন রিট করা যাবে কিনা সেগুলো ভেবে বৃথা কালক্ষেপন না করে দ্রুত আমাদের একটি ইতিবাচক যাত্রা শুরু করতে হবে।
জনাব মো: শামসুল আজম বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নের জন্য আজকের আলোচনা আবারো গতি আনবে বলে আমি আশা করি। সেটেলমেন্ট এর বিষয়ে যেকোন অভিযোগ সরাসরি আমাদের কাছে এসে জানালে আমরা চেষ্টা করবো সেগুলো আইন অনুযায়ি দ্রুত সমাধানের জন্য।
জনাব মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, পর্যাপ্ত জনবলের অভাব এবং অনেক সময় তহশীলদার বা সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের নিকট থেকে দ্রুত রিপোর্ট না পাওয়া ও ভিপি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের অবহলোর জন্যও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আমি আশাবাদী আমরা সকলেই যদি একটু তাগিদ দিয়ে কাজ করি তাহলে দ্রুত এই আইনের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
কাজল দেবনাথ বলেন, পাকিস্তান সরকার আমাকে বলেছিল শত্রু, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারত মিত্র হয়ে গেলেও আমি এখনো শত্রু রয়ে গেলাম। পরে অবশ্য কিছুটা ভদ্র হয়ে বলা হলো অর্পিত। তবে বর্তমান সরকার অর্পিত সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আন্তরিক এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য সকলের সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই। দিনাজপুর জেলার কথায় যদি ধরি তাহলে দুই তিন মাস অন্তর অন্তর যদি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রতিবেদন ও পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে ভিপি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মহোদয়সহ সকলেই অবগত থাকবেন এবং এই বিষয়টি সুরাহার পথ ত্বরান্বিত হবে।
জনাব এস. এম রেজাউল করিম বলেন, অর্পিত সম্পতি আইন একটি কালো ও বৈষম্যমুলক আইন। এই বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন হলেও এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উপকারভোগীদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া পাকিস্তান আমলে নিয়মানুযায়ি যেভাবে শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করা উচিত ছিল সেভাবে সেটি করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, আইন মন্ত্রনালয় এর নির্দেশনায় বলা হয়েছে যেসব অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ে ডিক্রী প্রদান করা হয়েছে সেগুলোর অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়সহ সকলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
অর্পিত সম্পত্তি সমন্বয় জাতীয় সেলের সদস্য সচিব শামসুল হুদা বলেন, অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে যে সমস্যা বিরাজমান সেটি নিয়ে বরেণ্য গবেষক আবুল বারাকাতের নেতৃত্বে ৩টি বড় বড় গবেষণা হয়েছে। সেখানে দেখানে হয়েছে দেশের মোট সংখ্যালঘুদের ৪৫ ভাগ শত্রু সম্পত্তি আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এটি এখন একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি ও অসাম্প্রদায়িকতা রক্ষার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সিডিএ’র পরিচালক শাহ-ই-মবিন জিননাহ্ বলেন, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ হয়েছিল। এর ফলে শত্রু সম্পতি নামে যে কালো আইন করা হয়েছিল সেটি থেকে আমরা আজ মুক্ত হতে চাই। এর জন্য অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ করে সোনার বাংলা গড়েছি ঠিক সেভাবে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের ইতিবাচক হতে হবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সুনামের জন্যই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
আলোচনার শুরুতে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ এবং মহামান্য হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় সম্পর্কে এ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ সিরাজী তার উপস্থাপনায় বলেন, পাক-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষপটে ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা ও জীবনের ভয়ে যেসমস্ত হিন্দু পরিবার জীবনের ভয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন সেসব সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। এরপরে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ২৯/১৯৭২ এর মাধ্যমে শত্রু সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রফেসর আবুল বারাকাত ও অন্যান্যদের গবেষনায় দেখা যায় মোট ২৭ লক্ষ হিন্দু খানার মধ্যে ১২ লক্ষ অর্থাৎ তাদের মধ্যে ৪৪ ভাগের সম্পত্তি শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি হয়ে যায়। ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করা হলেও সেটির যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।
এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এ্যাডভোকেট রফিকুল আমিন; স্টিফেন মুরমু, উপপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, দিনাজপুর; এ্যাডভোকেট প্রফুল্ল কুমার রায়, সদস্য, পরিচালনা কমিটি, ব্লাস্ট; আব্দুল হামিদ; বদিউজ্জামান বাদল, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি, দিনাজপুর জেলা; রবীন্দ্রনাথ সরেন, সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ; এ্যাডভোকেট মনিরা বেগম, ব্লাষ্ট, দিনাজপুর; মোস্তফা তারা; সত্য ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক, জেলা উদীচী; আশীষ কুমার ব্যানার্জী; রুবেন মুরমু; রতন সিং, সাংবাদিক; স্বরুপ বকশী, সভাপতি, দিনাজপুর প্রেসক্লাব প্রমুখ।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।